ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জয়ের ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ 

যুবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান প্রশাসনিক প্রশ্রয় দেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ইমন।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনির বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ইমনের। ওই ঘটনায় বাড়িওয়ালা ইমনের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এর কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত আরাফাত ভুক্তভোগী ইমনকে ফোন দিয়ে আরমান খান যুবর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে ইমন যুবকে কল দেন। তখন ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের সামনে যেতে বলেন যুব। রাত ১২টার দিকে যুব ইমনকে মোটরসাইকেলে নিয়ে হলের ভেতরে ঢুকে ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন।

কক্ষে ঢুকতেই ঘুষি মেরে ইমনের নাক ফাটিয়ে দেন যুব। নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর চিৎকার করতে থাকেন ইমন। তখন ইমনের মুখ বেঁধে দেন আরাফাত। এরপর যুব ও আরাফাতসহ সেখানে উপস্থিত অন্য অভিযুক্তরা এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। তখন ইমন সবাইকে না মারার জন্য অনুরোধ করলেও কেউ তার কথা না শুনে মারতে থাকে। তাকে একদফা মারধরের পর কক্ষের ভেতরেই ইয়াবা সেবন করেন যুব। এরপর আবারও নির্যাতন শুরু করেন অভিযুক্তরা। তখন ইমনের শরীরে মদ ঢেলে যুব ও তার সহযোগীরা বলতে থাকে, ‘তুই মরে গেলে সবাইকে বলব মদ খেয়ে মরে গেছে’।

এরপর রাত তিনটার দিকে ইমনকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায় তুষণ। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে রুঢ় ভাষায় গালিগালাজ করেছেন বলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন তুষণ। এরপর তাকে আবার ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন যুব পিস্তল বের করে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল সেখানে গিয়ে ইমনকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধানে আশ্বস্ত করে হল থেকে চলে যেতে বলেন।

এর আগে মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানকে অবহিত করেন ইমন। পরদিন ১৪ আগস্ট সকালে মারধরের ঘটনার বিষয় জানাতে প্রক্টরের বাসায় যান তিনি। ইমন সেখানে গিয়ে দেখেন আকতারুজ্জামান সোহেল সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত রয়েছেন। প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলা শেষে সোহেল ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ইমন সোহেলকে শরীরে মারধরনের দাগ দেখালে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যান।

এরপর ইমন ঘটনাটি আল নাহিয়ান খান জয় এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে জানান। তখন জয় তার সঙ্গে দেখা করেন। যুব ইমনকে আরও ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে কিছুদিন বাইরে থেকে ঘুরে আসার পরামর্শ দেন জয়। এরপর সাত দিন জয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া পাননি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান ইমন বলেন, সে দিনের ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করায় আমি প্রচন্ড দূর্বলতা অনুভব করি। রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমাতে পারি না। আমার আত্মসম্মান সব শেষ হয়ে গেছে। আমি সেদিনের ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে আত্মহত্যা করতে চাই। আমি এর আগেও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি, কিন্তু শক্তি পাইনি।

এর আগেও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে বহিরাগত কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করেন যুব। এর সঙ্গে হলটির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও জড়িত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যুব চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করেন বলেও জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।’

মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা আমি জানি না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে ফোন করলে, তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রতিনিধি/এইচই