শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

লাল শাপলায় শোভিত নুরুইলের বিল

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

লাল শাপলায় শোভিত নুরুইলের বিল
ছবি : ঢাকা মেইল

হেমন্তকালের ভোরে হালকা কুয়াশাঘেরা সকালে সবেমাত্র সূর্য আকাশে উঁকি দিচ্ছে। নুরুইল বিলে তখন মেলতে শুরু করেছে লাল শাপলা। বিলের স্বচ্ছ পানিতে লাল শাপলা ফোটার দৃশ্য দেখে প্রথমে যে কারোরই মনে হবে, পানিতে কেউ লাল চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন।

যেদিকে চোখ যায় কেবল লাল শাপলা। লাল শাপলার সৌন্দর্যে পূর্বের আকাশের সূর্যের রক্তিম আভাকে যেন আলিঙ্গন করেছে। শাপলায় ঢেকে গেছে পুরো বিল। যেন বিলজুড়ে শাপলার মেলা। এর সঙ্গে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ প্রকৃতি তার আপন রূপের আলো ছড়াচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


bogura

বগুড়া জেলার ৭ নম্বর শেখেরকোলা ইউনিয়নের নুরুইল বিলে লাল শাপলা ফোটে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিল। এ বিলে শীতকালের শুরুতেই ফোটে লাল শাপলা। এর অবস্থান মাটিডালী-পীরগাছা রাস্তার নুরুইল গ্রামের পূর্ব দিকে। ডেকরা হিন্দু পাড়া গ্রাম দিয়েও এ বিলে প্রবেশ করা যায়। 

শাপলার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটকেরা ভিড় জমান বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নৌকা করে পুরো বিল ভ্রমন করে থাকেন। এখানে অতিথি পাখি দেখা যায়। প্রচুর পরিমানে দেশি প্রজাতির মাছও পাওয়া যায়।

bogura


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে যখন সূর্য উদয় হচ্ছিল, তখন নুরুইল বিলে নৌকার মাঝিদের মধ্যে দু-একজন উপস্থিত হয়েছেন। নৌকা ঘাটে একজন পর্যটকদের নৌকা দিতে ক্রম সাজাচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে নৌকার মাঝির সংখ্যা। অন্যদিকে বাড়তে থাকে পর্যটকদের আনাগোনাও। নৌকায় বিলের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেককে। 

এ বিলে লাল শাপলা ছাড়াও সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও কম-বেশি চোখে পড়ে। বছরের ছয় মাস এই বিলে পানি থাকে। এ ছয় মাসই এই সময়ে লাল শাপলার সমারোহ ঘটে। কোনো রকম চাষাবাদ ছাড়াই গত ১০-১২ বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলা ফুল ফোটে। 

ডেকরা হিন্দু পাড়া গ্রামের মাঝি কৃষ্ণ কমল বলেন, সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা ঝিমিয়ে  পড়ে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই এই বিলে ফুটছে আকর্ষণীয় লাল শাপলা। যা বিলের আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। বর্ষাকালে বিলটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আর বাকি ছয় মাস এখানে  ধানের চাষাবাদ হয়। মাত্র কয়েক মাসের জন্য এখানে শাপলা ফোটে। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল।

bogura

তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন।

মাঝি কৃষ্ণ কমল বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন দেখতে আসে এই বিল। আমরা মাঝিরা তাদের নৌকায়  নিয়ে পুরা বিল ঘুরিয়ে দেখাই, শাপলা তুলে দেই। এই ছয় মাস আমাদের ভাল আয়, রোজগার  হয়। প্রতি খ্যাপে ৩০০-৫০০ টাকা আয় করি। এই এলাকায় এই বিল আছে বলে আমরা মাছ মেরে, দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে নিয়ে এই ছয় মাস জীবিকা নির্বাহ করি। 

স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান হয়ে নতুন স্বপ্নের ডানা মেলতে পারে এই বিল। খরার মৌসুমে ধান, বর্ষা মৌসুমে মাছ, পাশাপাশি লাল শাপলায় বিলটি পর্যটন সম্ভাবনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সৌন্দর্যের সঙ্গে নতুন করে আকৃষ্ট করেছে। এখন প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।  

bogura

পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা জান্নাতুল বলেন, লাল শাপলা বিলটি দেখে যে কারোরই মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। সাত সকালে এমন দৃশ্য আর কোথাও পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ আছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাস্তা মেরামত করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অনেক ছবি তুলেছি, নৌকায় করে পুরো বিল ঘুরিয়েছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। 

শাপলা বিলে বেড়াতে আসা বগুড়া শহরের জলশরীতলার বাসিন্দা আচোল বুটিক্সের স্বত্বাধিকারী উম্মে ফাতেমা লিসা বলেন, বিলের মধ্যে লালগালিচা বিছানো এমন দৃশ্য যে কারও মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেবে। ভাবতেই পারছি না, এমন বিল আমাদের শহরেই আছে। এই বিলে জাতীয় ফুলের প্রাকৃতিক সমারোহ আমার মন কেড়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে আমার মতো অনেকেই এসেছেন শাপলা দেখতে। 

উম্মে ফাতেমা লিসা বগুড়া চেম্বার্স অফ কমার্সের সদস্য। 

গ্রামের কয়েকজন নারী ও শিশু বিলের পানিতে নেমে শালুত তুলছে। তাদেরই একজন তুলসী। তিনি জানান, এগুলো বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয় করেন তারা। শালুক বাজারে বিক্রি করেন, আবার রান্না করেও খান।

বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন বলেন, আমি শুনেছি নুরুইল বিলের শাপলার সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই যাচ্ছেন। আমি কখনো যাইনি, তবে যাবো। গিয়ে দেখে এসে পর্যটক স্পট করা যায় কিনা একটা সিদ্ধান্ত নিবো।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর