শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রতিবছর শোক পালন করা কি জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রতিবছর শোক পালন করা কি জায়েজ?

প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ-বেদনা কঠিন বাস্তবতা। প্রিয়জনের মৃত্যুর ফলে পাওয়া দুঃখকেই সাধারণত শোক বলা হয়। মহান আল্লাহ এই কষ্টের বিনিময় দান করবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হব।’ (তিরমিজি: ২৪০১)

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, ইসলামে শোক পালনেরও নির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে। তা হলো কেউ মারা গেলে শোক পালন করবে তিন দিন। তিন দিন পরে শোক পালনের কোনো সুযোগ নেই, বরং চতুর্থ দিন থেকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে। তবে হ্যাঁ, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী চার মাস ১০ দিন অথবা গর্ভস্থিত সন্তান (যদি থাকে) প্রসব হওয়া পর্যন্ত শোক পালন করবে। 


বিজ্ঞাপন


উম্মু আতিয়্যাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো মহিলা যেন মৃতের জন্য তিনদিনের অধিক শোক পালন না করে, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন ব্যতীত। এছাড়া সে যেন রঙ করা সুতার কাপড় ছাড়া কোনো রঙিন কাপড় না পরে, সুরমা না লাগায় ও সুগন্ধি ব্যবহার না করে। অবশ্য ঋতুস্রাব হতে পাক হওয়ার সময় ’কুস্ত্ব’ ও ’আয্ফার’ জাতীয় কাঠের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। (বুখারি: ৫৩৪২; মুসলিম: ৯৩৮; মেশকাত: ৩৩৩১)

মূলত নারীর তিন দিনের বেশি এই শোক পালন হলো ইদ্দত। ইদ্দত পালনের সময় ঘর থেকে জরুরত ছাড়া বের হওয়া যাবে না এবং অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। ইদ্দত পালন করা মহিলাদের জন্য আবশ্যক। তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হলে তিন হায়েজ পরিমাণ সময় হলো ইদ্দত। (সুরা বাকারা: ২২৮) আর যদি স্বামী মারা যায়, তাহলে স্ত্রীকে চার মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে..।’ (সুরা বাকারা: ২৩৪) 

অতএব ইসলামের বিধান হলো কেউই তিন দিনের অতিরিক্ত শোক পালন করবে না। শুধু স্বামী মারা গেলে চার মাস ১০ দিন অথবা সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত মহিলারা শোক পালন কিংবা ইদ্দত পূর্ণ করবেন। মৃত্যু দিবস পালন করা, এ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা, নতুন করে আবার শোক দিবস পালন করা—এসব ইসলামে নেই। মৃত ব্যক্তিদের ব্যাপারে যা করণীয় ইসলামে রয়েছে তা হলো, সব সময়ই তাদের জন্য দোয়া করা। 

নবী (স.)-এর জীবনেও শোক এসেছে। বিভিন্ন সময় তাঁর প্রিয়জনদের হারাতে হয়েছে। জন্মের আগে পিতাকে আর ছয় বছর বয়সে মমতাময়ী মাকে হারান। আট বছর বয়সে দাদাকে হারিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। নবুয়তের দশম বছরের নবী (স.)-এর চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তিন বা পাঁচ দিনের ব্যবধানে তাঁর সহধর্মিণী খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ইন্তেকাল করেন। এছাড়া নবী (স.)-এর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফাতিমা (রা.) ছাড়া সবাই তাঁর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। সন্তান হারানোর কষ্ট তাঁকে সইতে হয়েছে। তিনি প্রতিবছর শোক পালন করেননি। সাহাবিদের জীবনীতেও শোক দিবস পালনের উদাহরণ নেই। আমাদেরকেও প্রিয়নবী ও সাহাবিদের অনুসরণ করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


নীরব কান্নায় চোখ অশ্রুসজল হতে পারে। মনের বেদনায় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে পারে। তাতে সমস্যা নেই। তখন আবারও ইন্নালিল্লাহ পড়ে আল্লাহর দিকেই অগ্রসর হতে হবে। হাদিসে এসেছে, নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদে পড়ে অতঃপর যখন তা স্মরণ হয় তখন ‘ইন্নালিল্লাহ...’ বলে, আল্লাহ তাকে তেমন নেকি দেবেন যেমন নেকি দিয়েছিলেন বিপদগ্রস্ত হওয়ার দিন।’ (শুআবুল ঈমান: ৯৬৯৫)

কিন্তু যারা প্রতিবছর শোকপ্রকাশের নামে চিৎকার করে, বুক চাপড়ে কাঁদে, মাতম করে এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে- তাদের জানতে হবে যে, এসব ইসলামের অনুমোদিত পদ্ধতি নয়। বরং এগুলো জাহিলি কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘যে শোকে গালে চপেটাঘাত করে, জামার অংশবিশেষ ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ১২৩৫; মুসলিম: ২৯৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে শরিয়তের নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর