শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। এমন কিছু শিরক রয়েছে, যা সম্পর্কে অনেকের ধারণাও নেই। যেমন রিয়া বা লোক দেখানো আমল এক প্রকার শিরক। আবার কিছু কথাবার্তায়ও শিরক প্রকাশিত হয়। যেমন- তুমি যথাসময়ে না আসলে আমার ছেলে মারা যেত। এ ধরণের কথা শিরক। এছাড়াও জ্যোতির্বিদ, গণক, ঠাকুরদের কাছে অদৃষ্টের কথা জিজ্ঞেস করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বা কিছুর নামে শপথ করা ইত্যাদি ভয়াবহ শিরকের অন্তুর্ভুক্ত। এরকম শিরক থেকে, জানা-অজানা সকল ভয়াবহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া করার বিকল্প নেই।
মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি আবু বাকর সিদ্দিক (রা.)-এর সঙ্গে নবী (স.)-এর কাছে গেলাম। তিনি (স.) বলেন, হে আবু বকর! নিশ্চয়ই শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর (রা.) বলেন, আল্লাহর সঙ্গে কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি কারো শিরক আছে? নবী (স.) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, তুমি যা বললে কম বা বেশি সব শিরকই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেন, তুমি বলো— ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত, তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৫১)
বিজ্ঞাপন
উল্লেখিত হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি (আরবিতে) হলো— ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন-আশরিকা বিকা, ওয়া আনা আ’লামু; ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু।’ অর্থ: হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত, তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫৫১)
তাই শিরকের গুনাহের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা উচিত। কেননা আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকেও শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০)
তবে, কারো যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কুফরি বা শিরকি বাক্য মুখ থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে ঈমানের কোনো ক্ষতি হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বাধ্য হয়ে করা বিষয় ক্ষমা করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২০৪০)
তারপরও ঈমান ও কুফরের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত, যেন কখনও কুফরি বা শিরকি কথা অসতর্কতায়ও প্রকাশ না পায়।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, প্রকাশ্যে-গোপনে করা সকল গুনাহ ক্ষমার একটি সুন্দর দোয়া এখানে উল্লেখ করা হলো— اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও।’ এটি নবী কারিম (স.) নামাজে সালাম ফেরানোর আগে পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ৬৩৯৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সবসময় শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দোয়াগুলো মুখস্থ করার এবং নিয়মিত আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

