শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রিজিক কি নির্ধারিত? বাড়ে-কমে কীভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

রিজিক কি নির্ধারিত? বাড়ে-কমে কীভাবে

রিজিক মহান আল্লাহর অনন্য নেয়ামত। রিজিক শুধু অর্থকড়ি কিংবা খাওয়া-দাওয়া নয়। ঈমান-আমল, ইলম ও নেককার স্ত্রী-সন্তানসহ মানুষের সামগ্রিক জীবনের বৈধ সব উপায়-উপকরণই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের আবশ্যকীয় এই জীবনোপকরণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি এদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে (জীবনধারণের) সব কিছুই লিপিবদ্ধ আছে।’ (সুরা হুদ: ৬)

পবিত্র কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী রিজিকের ব্যবস্থা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আকাশে আছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু।’ (সুরা জারিয়াত: ২২)


বিজ্ঞাপন


রিজিক সমভাবে বণ্টন না হওয়ার কারণ হিসেবে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা শুরা: ২৭)

আল্লাহর পরীক্ষার কারণেও রিজিকের কম-বেশি ও উত্থান-পতন হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের রিজিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা ত্বহা: ১৩১)

আবার কিছু পাপের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দার রিজিক সংকীর্ণ করে দেন। অর্থাৎ রিজিকের যে সুফল, সেই সুফল পাওয়া যায় না। আল্লাহর ভয় না থাকলেও রিজিকের বরকত কমে আসে বলে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। এখানে রিজিক কমে যাওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো। 

যেসব কারণে রিজিকের বরকত কমে
১. তাকওয়ার অভাব
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকতগুলো তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত, তার কারণে আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)


বিজ্ঞাপন


২. আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীনতা
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৯) 

আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি ‍দুনিয়ায় দেওয়া হয়

৩. সুদ
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের যে সুদ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। যদি তোমরা এমন না করো তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন। (সুরা বাকারা: ২৭৬) 

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যাদের মাঝে ব্যভিচার ও সুদ বিস্তার লাভ করলো, তারা নিজেদের উপর আল্লাহর আজাব নামিয়ে নিলো।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩৮০৯; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪৯৮১)

৪. অকৃতজ্ঞতা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

৫. জাকাত না দেওয়া
জাকাত না দিলেও রিজিকের বরকত চলে যায়। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার মহানবী (স.) আমাদের কাছে এলেন। অতঃপর বললেন, যারা নিজের ধন-সম্পদের জাকাত বন্ধ করে দেবে, তাদের জন্য আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ রাখা হবে। এমনকি চতুষ্পদ জন্তু না থাকলে আদৌ বৃষ্টি হবে না।’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৩/৩২০; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)

৬. ব্যভিচার
রিজিকের বরকতম কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার। ব্যভিচারের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে জাতির মাঝে ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, তাদের দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে পাকড়াও করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭৮১২; মেশকাত: ৩৫৮২)

উল্লেখিত গুনাহগুলো বান্দার রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসার মূল কারণ। মূলত আল্লাহর অবাধ্যতা বা গুনাহের কারণে শুধু পরকালে নয়, অনেক সময় দুনিয়ায়ও শাস্তি ভোগ করতে হয়। রিজিকের বরকত কমে যাওয়াও একটি দুনিয়াবি শাস্তি। গুনাহের কারণে বড় বিপদাপদ, অভাব-অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসে বলে হাদিসে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)

যেসব আমলে রিজিক বাড়ে
১. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা। (সুরা তালাক: ২-৩)

২. পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। (বুখারি: ৫৯৮৫; মুসলিম: ৪৬৩৯)

আরও পড়ুন: আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরতে গেলে যে সওয়াব

৩. তাওবা ও ইস্তেগফার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭)

৪. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। (সুরা সাবা: ৩৯)

৫. বারবার হজ-ওমরা করা। (তিরমিজি: ৮১৫)

৬. অসহায়ের প্রতি সদয় আচরণ করা। (বুখারি: ২৮৯৬)

৭. ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করে নেওয়া। (তিরমিজি: ২৬৫৪)

৮. আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা। (সুরা নিসা: ১০০)

৯. বিয়ে করা। (সুরা নুর: ৩২)

১০. অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। (সুরা মুমিন: ৬০)

উল্লেখ্য, রিজিকে বরকত আসার উদ্দেশ্য শুধু টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া নয়; রিজিকের বরকত কখনো উভয় জাহানের হতে পারে। যেমন মুমিনরা দুনিয়ার পাশাপাশি পরকালীন সওয়াব পাবেন। আর পরকালীন প্রতিদান দুনিয়ার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু যারা আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে না, তারা তাদের ভালো কাজের প্রতিদান এবং পাপ না করার ফল দুনিয়ায়ই পেয়ে যায়। তারা দুনিয়ায় যা অর্জন করছে তা মুমিনের পরকালীন প্রতিদানের তুলনায় কিছুই নয়।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর