শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মসজিদে আকসা ও ডোম অব রক কি আলাদা?

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০১:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

মসজিদে আকসা ও ডোম অব রক কি আলাদা?
dom of rock and kibli mosque

মসজিদুল আকসা এবং ইসলামি স্থাপত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। অনেকেরই প্রশ্ন- আল আকসা আসলে কোনটি? এর উত্তর হলো- আসলে অনেকগুলো স্থাপনা নিয়ে পুরো জায়গাটার নামই আল আকসা। কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্যা রকের অবস্থান আল-আকসার অভ্যন্তরে। 

যেমন মক্কার পবিত্র মসজিদে হারাম শুধুমাত্র কাবার নাম নয়। এর অভ্যন্তরে রয়েছে কাবা প্রাঙ্গন, হাজরে আসওয়াদ, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া পাহাড়, জমজম কূপ ইত্যাদি। তদ্রুপ আল আকসার অভ্যন্তরেও মসজিদ, গম্বুজ, আঙিনা, মিহরাব, মিম্বার, কূপসহ ২০০টি ছোট বড় স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রকও রয়েছে। এটি আল আকসার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। একে মারওয়ানি মসজিদও বলা হয়। সুতরাং কেউ সেখানে নামাজ পড়লে মসজিদে আকসায় নামাজ পড়েছেন বলে বিবেচিত হবেন। এমনকি আল আকসার বিশাল আঙিনায় হাজারো মানুষকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। তারাও মসজিদে আকসায় নামাজ পড়েছেন বলেই গণ্য হবেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কোরআনের বর্ণনায় ইহুদি সম্প্রদায়

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, আসলে মসজিদুল আকসা বলতে কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ (কুব্বাতুস সাখরা) ও বুরাক মসজিদের সমন্বয়কে বোঝানো হয়, যা জেরুজালেমের ‘হারাম আল শরিফ’-এর চার দেয়ালের মধ্যেই অবস্থিত। প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও ইতিহাসবিদ আল্লামা ইবনে তাহমিয়া (রহ)-এর মতে, আসলে আল্লাহর নবী সুলায়মান (আ.)-এর তৈরি সম্পূর্ণ ইবাদত স্থলটির নামই হলো- মসজিদুল আকসা। 

মসজিদুল আকসা সর্বপ্রথম কে নির্মাণ করেন তা নিয়ে মতভিন্নতা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আদম (আ.), নুহ (আ.)-এর ছেলে সাম, ইয়াকুব (আ.) ও মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)। তবে গবেষক আলেমরা আদম (আ.)-কে মসজিদুল আকসার নির্মাতা হওয়ার মতকে প্রাধান্য দেন। কেননা ‘রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আকসার নির্মাণকালের পার্থক্য বলেছেন ৪০ বছর।’ (সহিহ বুখারি: ৩৪২৫)

আল আকসা কম্পাউন্ডের মোট আয়তন ১৪৪ একর, যা প্রাচীন জেরুজালেম শহরের ১৬.৬ ভাগের এক ভাগ। এর প্রবেশপথ ছয়টি। কম্পাউন্ডের ভেতরে রয়েছে ২৫টি সুপেয় পানির কূপ। রয়েছে বেশ কয়েকটি পানির ফোয়ারা। আরো আছে ৪০টি উঁচু আসন। যেখানে বসে প্রাজ্ঞ আলেমরা ধর্মীয় জ্ঞানের পাঠদান করে থাকেন। এসব স্থাপনা বিভিন্ন শাসনামলে নির্মিত।


বিজ্ঞাপন


কুব্বাতুস সাখরা অর্থ পাথরের গম্বুজ। অষ্টকোণ বিশিষ্ট এই সোনালি গম্বুজটি (ডোম অব দ্য রক) ৬৯১ সালে (৭২ হিজরিতে) উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান নির্মাণ করেন। ১৯৯৩ সালে জর্ডানের বাদশাহ হুসাইন তার বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া ৮.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ৮০ কেজি সোনা কিনে তা দান করে দেন ডোম অফ দ্য রকের জন্য। সেই স্বর্ণের প্রলেপের কারণেই গম্বুজটি জ্বলজ্বল করে। বর্তমানে এটি ইসলামি স্থাপত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা। এটিকে ফিলিস্তিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান বলে উল্লেখ করা হয়। মহানবী (স.) মেরাজের রাতে এখান থেকে মহাকাশ গমন করেন। এজন্য ধর্মীয় দিক দিয়ে স্থানটির আলাদা মর্যাদা রয়েছে।

dom-of-the-rock
কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে কোরআন-হাদিসের বাণী

আল আকসা কম্পাউন্ডের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত কিবলি মসজিদ। নির্মাণ করেন খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক। কিবলি মসজিদ নির্মাণ করতে ১০ বছর (৮৬-৯৬ হি.) সময় লেগেছিল। এর সাতটি আঙিনা ও বারান্দা রয়েছে। ধূসর সীসার প্লেট দ্বারা আচ্ছাদিত এই গম্বুজওয়ালা স্থাপনাটিকে মূল মসজিদে আকসা মনে করা হয়। এটি একাধিকবার পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হয়েছিল। যেমন ১৩০ হিজরি ও ৪২৫ হিজরির ভূমিকম্পের পর। 

kibli-mosjid
কিবলি মসজিদ বা আকসা মসজিদ

পবিত্র মক্কা ও মদিনার পর মসজিদুল আকসা মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। এটি অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিধন্য পুণ্যভূমি এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা। হিজরতের পর ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা মসজিদুল আকসার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন। রাসুলুল্লাহ (স.) মেরাজের রাতে মসজিদুল আকসায় গমন করেন। এছাড়া আল আকসা ইসলামি শিক্ষা ও মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতির তীর্থভূমি। মুসলিম শাসকদের জনকল্যাণমূলক বহু কাজের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে আছে পবিত্র এই ভূমি।

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল আকসা ও ফিলিস্তিন ভূমির বর্ণনা এসেছে, যা এই পবিত্র ভূমির বিশেষ মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১)

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, আলজাজিরা, মুরসাল ডটকম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর