শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এশার নামাজের মাহাত্ম্য ও প্রতিদান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

এশার নামাজের মাহাত্ম্য ও প্রতিদান

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও এশার নামাজের আলাদা মাহাত্ম্যের বর্ণনা দেখা যায় হাদিসে। কারণ, এই সময়টিতে মানুষ জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা করে। এজন্য বিশেষভাবে হাদিস শরিফে এই নামাজের আলোচনা উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ফজর ও এশার নামাজ মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত।’ (বুখারি: ৬৫৭)

এশার নামাজে অর্ধেক রাত ইবাদতের সওয়াব
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম: ১৩৭৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম: ৬৫৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নামাজ জামাতে পড়ার তাগিদ কেন?

এশার নামাজে মুনাফিকের তালিকা থেকে মুক্তি মেলে
উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (স.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ: ৫৫৪)

এশার নামাজের সময়
পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হওয়ার পর আকাশ প্রান্তে যে সাদা আভা চোখে পড়ে তা মুছে যাওয়ার পরই মূলত এশার সময় শুরু হয়। ওই সময় থেকে শুরু করে রাতের তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে এশার নামাজ পড়া মোস্তাহাব। তিনভাগ অতিক্রান্ত হবার পর থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়াও জায়েজ। আর অর্ধেক রাত থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়া মাকরুহের সাথে জায়েজ। অর্থাৎ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। বিলম্ব করার কারণে মাকরুহ হবে। (হেদায়া: ১/৫০-৫১, শরহে নুকায়া: ১/৫৩-৫৫, তামহিদ: ৮/৯২)

আরও পড়ুন: আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার ফজিলত


বিজ্ঞাপন


এশার সুন্নত নামাজের ফজিলত
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজের পরে দুই রাকাত সুন্নত খুব গুরুত্বপূর্ণ। এশার পরের দুই রাকাত সুন্নতের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো—জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, এশার পরে দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি: ৪১৪)

বিতির আলাদা নামাজ
বিতির এশার নামাজের অন্তর্ভুক্ত নয়, স্বতন্ত্র নামাজ, যা এশার পর এবং ফজরের আগে পড়তে হয়। শেষ রাতে তাহাজ্জুদে উঠতে না পারলে এশার নামাজের পরপরই তা পড়ে নেওয়া যায়। বিতিরসহ হিসাব করলে এশার নামাজ মোট ১৩ রাকাত হয়। তবে এশার আগের চার রাকাত সুন্নত সবসময় পড়তে না পারলে চার রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত ও তিন রাকাত মোট ৯ রাকাত প্রতিদিন গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা কর্তব্য।

যেকোনো নামাজের ব্যাপারে অবহেলা করা যাবে না। যারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে গাফেল’ (সুরা মাউন: ৪-৫)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজর-এশাসহ প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ জামাতে নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর