ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্ব হলো নামাজ পড়া। এটি ফরজ বিধান। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
যে মুসলিম নামাজ আদায় করে না তাকে ফাসেক বলা হয়। আর যে মুসলিম নামাজকে অস্বীকার করে তাকে কাফের বলা হয়। অতএব, নামাজ আদায় না করলে কেউ কাফের হয়ে যায় না।
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হয় যে, সে শিরক করেনি, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে। যদিও সে জেনা এবং চুরি করে থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ:১৮২৮৪, ২১৪৩৪, সহিহ বুখারি: ১২৩৭)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, শিরক না করা ব্যক্তি জেনা বা চুরির মতো অপরাধ করলেও কাফের হয়ে যাবে না। আরেক হাদিসে নবীজি বলেছেন- مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ ‘যে কোনো বান্দা ’লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং এ অবস্থার ওপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি: ৫৮২৭; মেশকাত: ২৬)
আরও পড়ুন
নামাজ না পড়ার শাস্তি
কাজা নামাজ কি তাওবা করলে মাফ হয়?
এই হাদিসের ভাষ্যমতে, আন্তরিকভাবে শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা ব্যক্তিও জান্নাতে যাবে। এখানে নামাজের কথা বলা হয়নি। সুতরাং নামাজ না পড়লে যদি ব্যক্তি কাফেরই হয়ে যায় তাহলে সে তো জান্নাতে যেতে পারত না।
বিজ্ঞাপন
আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, অবহেলাহেতু এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গিকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪২০)
এই হাদিস থেকেও বুঝা যাচ্ছে, নামাজ না পড়লে ব্যক্তি কাফের হবে না। যদি কাফের হয়ে যেত তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে পাঠাবেন। জান্নাতে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। অথচ হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে তাকে জাহান্নামে দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
সুতরাং নামাজ অস্বীকারকারী নয়—এমন ব্যক্তি নামাজ না পড়লে কাফের হবে না।
তবে, নামাজের ফরজিয়তকে অস্বীকার করে কেউ নামাজ না পড়লে সে কাফের হয়ে যাবে—এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
মুনাফিকের কাছে ভারী দুই নামাজ
নামাজে সচরাচর যে ৫টি ভুল বেশি হয়
উল্লেখ্য, ইসলামে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নামাজ না পড়ার কারণে কেউ কাফের না হলেও তাকে জাহান্নামে যেতে হবে না—এমনটি বলা যাবে না। কারণ পবিত্র কোরআনে এসেছে, জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে- ‘তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা সালাত আদায় করতাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩) হাদিস শরিফে নবীজি (স.) জানিয়েছন, ‘মুমিন ও শিরক-কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি: ২৬২০; আবু দাউদ: ৪৬৭৮)
সুতরাং নামাজ নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

