শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেসব কাজে মুমিনের লজ্জাবোধ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব কাজে মুমিনের লজ্জাবোধ

লজ্জাশীলতা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেসব গুণ ঈমানের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, লজ্জা এর মধ্যে অন্যতম। রাসুলে আকরাম (স.) বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলাম ধর্মের বিশেষ স্বভাব হল লজ্জা’ (মুয়াত্তা মালেক: ৩৩৫৯)। লজ্জাশীলতা নবীদের সুন্নত। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, চারটি জিনিস নবীদের সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত—লজ্জাশীলতা, সুগন্ধি ব্যবহার, মেসওয়াক, বিয়ে। (তিরমিজি: ১০৮০) 

মুমিনের চরিত্রে লজ্জা ও ঈমান পাশাপাশি সহোদরের মতো বসবাস করে। এর একটির অনুপস্থিতিতে আরেকটি চলে যায়। ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী (স.) বলেছেন, ‘লজ্জা ও ঈমান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং এর একটি তুলে নেওয়া হলে অপরটিও তুলে নেওয়া হয়’। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে ‘যখন উভয়ের কোনো একটিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন অপরটিও তার পশ্চাতে অনুগমন করে।’ (বায়হাকি; সহিহ আত-তারগিব: ২৬৩৬; মেশকাত: ৫০৯৩)


বিজ্ঞাপন


অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) লজ্জাকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ঈমানের ৭০টির অধিক শাখা রয়েছে এবং লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা’ (বুখারি: ৯; মুসলিম: ৩৫)। মহান রাব্বুল আলামিন নিজেও লজ্জার গুণে গুণান্বিত। তিনি চান তাঁর বান্দা-বান্দিরাও এ গুণে গুণান্বিত হোক। নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল ও দয়াময়, তিনি লজ্জাবোধ করেন যে, সে (বান্দা) তাঁর নিকট হাত তুলবে আর তিনি তা খালি ফিরিয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজা: ৫৩৭৫; আবু দাউদ: ২০০২)। লজ্জা এমন একটি গুণ, যাতে পার্থিব ও অপার্থিব দুই জগতেই অসংখ্য কল্যাণ লাভ করা যায়। রাসুল (স.) বলেন, ‘লজ্জাশীলতা কেবল কল্যাণ ও মঙ্গলই বয়ে আনে।’ (বুখারি: ১০২৭৫; মুসলিম: ১৯১)

নির্লজ্জ মানুষ যা খুশি তা-ই করতে পারে। মহানবী (স.)-এর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আবু মাসউদ বদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ পূর্ববর্তী নবীদের বাণী থেকে এ কথা জেনেছি যে, যখন তোমার লজ্জা নেই, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৬৯)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) মুমিনদের লজ্জা ও শালীনতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং লজ্জাহীন মানুষের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। লজ্জাহীনতা মানুষকে অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায়। অথচ লজ্জা বান্দাকে ঈমানের আলোয় আলোকিত করে। মহানবী (স.) বলেন, ‘কোনো কিছুতে অশ্লীলতা তাকে শুধু কলুষিত করে আর কোনো কিছুতে লজ্জা তাকে শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২৬৮৯)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, মুমিনের লজ্জা ১০ প্রকার হয়ে থাকে। সেগুলো হলো—


বিজ্ঞাপন


১.  অপরাধজনিত লজ্জা: এ ধরনের লজ্জা নিয়ে আদম (আ.) জান্নাত ত্যাগ করেছিলেন।

২. অপূর্ণতার লজ্জা: যেমন ফেরেশতাদের লজ্জা। যারা দিন-রাত তাসবিহ-তাহলিলে লিপ্ত। কোনো মিথ্যা অপবাদ দেয় না। কেয়ামতের দিন তাঁরা বলবেন, ‘হে প্রভু, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার প্রকৃত ইবাদত করিনি। ’

৩. সম্মানজনিত লজ্জা: এটি হলো মারেফত থেকে অর্জিত লজ্জা। প্রত্যেক বান্দার মধ্যে আল্লাহর মারেফাত অনুযায়ী লজ্জাবোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

৪. মহানুভবতাজনিত লজ্জা: যেমন নবী (স.)-এর লজ্জা সেসব মানুষের জন্য যাদের তিনি জয়নব (রা.)-এর অলিমাতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। তারা দীর্ঘক্ষণ তাঁর কাছে বসে থাকেন, ফলে নবী (স.) দাঁড়ালেন; কিন্তু তিনি এ কথা বলতে লজ্জাবোধ করলেন যে, তোমরা চলে যাও।

৫. বিনয়ের লজ্জা: যেমন আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর লজ্জা। ফাতেমা (রা.) উপস্থিত থাকায় তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে মজি নির্গত হওয়া বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করেছিলেন।

৬. আত্মগ্লানির লজ্জা: যেমন বান্দা যখন তার প্রভুর কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো চায়। তখন সে তার নিজের প্রবৃত্তিকে হেয়প্রতিপন্ন করত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।

৭. ভালোবাসাজনিত লজ্জা: প্রেমিকের অন্তরে প্রেমাস্পদের লজ্জা। এমনকি যখন তার অন্তরে মাহবুবের কোনো দোষের চিন্তাও উদয় হয়, তখন অন্তরে লজ্জা অনুভূত হয় ও তার প্রতিক্রিয়া চেহারায় ফুটে ওঠে। অথচ সে জানে না তার কারণ কী? অনুরূপভাবে প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের সাক্ষাৎ ও তার সঙ্গে নিভৃতে মধুর আলাপ করার আকাঙ্ক্ষা করে। তাদের কথাবার্তা অতিসুন্দর ও চমৎকার। আর এ ধরনের লজ্জা ও চমৎকারিত্বের  কারণ বেশির ভাগ মানুষ জানে না।

৮. দাসত্বের লজ্জা: এটি ভালোবাসা ও ভয়ের সংমিশ্রিত লজ্জা। বান্দা দেখতে পায় যে, আল্লাহর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও অতি উচ্চ সম্মান অনুযায়ী তাঁর ইবাদত সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। সুতরাং তার ইবাদতের এ অবস্থা তার জন্য লজ্জা আবশ্যক করে।

৯ আত্মমর্যাদাজনিত লজ্জা: নিজের প্রবৃত্তির জন্য লজ্জা অনেক বড় হয়, যখন ব্যয় অথবা দানের ও ইহসানের ক্ষেত্রে এমন কিছু প্রকাশ পায়, যা তার মর্যাদানুযায়ী হয়নি। সুতরাং সে তার এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে লজ্জা করে তা হলো সম্মান ও আত্মমর্যাদাজনিত লজ্জা।

১০. ব্যক্তির প্রবৃত্তি হতে লজ্জা: মানুষ তার নিজের জন্য যে পরিমাণ সম্মান ও উচ্চ মর্যাদায় সন্তুষ্ট হয় তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে লজ্জিত হয়। 

(হাদিসের আলোয় জীবন গড়ি, পৃষ্ঠা-১৫৭)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর