শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভালোবাসার দোহাই দিয়ে যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০২২, ০৫:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

ভালোবাসার দোহাই দিয়ে যে দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) একদিন তাঁর প্রিয় সাহাবী হজরত মুআজ বিন জাবাল (রা.)-এর হাত ধরে বললেন, ‘মুআজ! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ মুআজ (রা.) তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন, ‘আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! আল্লাহর কসম, আমিও আপনাকে ভালোবাসি।’ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, মুআজ! আমি তোমাকে বলছি, কখনোই নামাজের পরে এ দোয়া পড়তে ভুল করো না—

اللّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার জিকির, আপনার কৃতজ্ঞতা ও শোকর আদায় এবং সুন্দর করে আপনার ইবাদত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করুন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২১১৯; সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৪)

উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে, দোজাহানের সর্দার তাঁর প্রিয় সাহাবীকে কসম করে, তা-ও ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুকরিয়ার দোয়াটি পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের গুরুত্ব কত বেশি হলে রাসুলুল্লাহ (স.) এমন উপদেশ দেন, তা মুমিন মুসলমানের চিন্তা করা দরকার।

নবীজির (স.) পূর্ববর্তী নবী হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, ‘তোমার পরবর্তীতে আমি এক উম্মত পাঠাব, কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয়, তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৭৫৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম: ১২৮৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৪১৬৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ:১৬৭০৪)

উম্মতে মুহাম্মদীর চরিত্র তো এটাই হবে। সবকিছুতেই শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কেননা এই উম্মতের সবকিছুই কল্যাণকর। আর সেই কল্যাণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পুরষ্কার। হাদিসে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন নবীজি (স.)। তিনি ইরশাদ করেন—

‘মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে, সে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)

বান্দা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করে। যা গুনে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—

‘তোমরা যদি আল্লাহর নিআমত গুনতে চাও, তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৪)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কৃতজ্ঞ যিনি ছিলেন, তিনি হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)। রাত জেগে জেগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামায পড়তে গিয়ে কখনো নবীজি (স.)-এর পা ফুলে যেত। হজরত আয়েশা (রা.) একদিন জানতে চাইলেন- আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ কি আপনার আগে-পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেননি? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) উত্তরে বললেন—

أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا

‘আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চাই না? (সহিহ বুখারি: ৪৮৩৭)

কৃতজ্ঞতা মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পরকালীন সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অধিক নেয়ামত লাভের মাধ্যম এ কৃতজ্ঞতা। আর আখেরাতের অসীম পুরস্কারের ঘোষণা তো আছেই। এক হাদিসে এসেছে—

‘খাওয়ার পর যে আল্লাহর শোকর আদায় করে সে ধৈর্যশীল রোজাদার ব্যক্তির সমান পুরস্কার লাভ করবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৬৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুকরিয়া আদায়কারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর