শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিতর নামাজের রাকাতসংখ্যা ও পড়ার নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বিতর নামাজের রাকাতসংখ্যা ও পড়ার নিয়ম

বিতর আরবি ‘আল-বিতরু’ শব্দ থেকে উদ্ভুত। এর শাব্দিক অর্থ বিজোড়। বিতর নামাজকে বিতর বলার কারণও এটি। ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত বিতর নামাজের সময়। সাধারণত ইশার নামাজের পরে বিতর পড়ার নিয়ম। তবে শেষ রাতে ইবাদতের ইচ্ছা ও ঘুম থেকে জাগার জোরালো সম্ভাবনা থাকলে তাহাজ্জুদের পরেই বিতর পড়া উত্তম।

বিতর নামাজ কত রাকাত
হাদিসে বিতর নামাজের রাকাতসংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও হানাফি মাজহাবমতে বিতর নামাজ তিন রাকাত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (স.) বিতরের নামাজ তিন রাকাত আদায় করতেন।’ (সুনান দারু কুতনি: ১৬৫৯; বাদাইয়েউস সানায়ি, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা-২৭২)


বিজ্ঞাপন


মহানবী (স.) সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামাজ পড়তেন এবং বিতর তিন রাকাত পড়তেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে নবীজি (স.) বিতরে কত রাকাত পড়তেন? জবাবে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, ১০ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং ১৩ রাকাতের বেশি পড়তেন না। (সুনানে আবু দাউদ: ১/১৯৩, হাদিস ১৩৫৭ (১৩৬২); তাহাবি: ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ: ৬/১৪৯, হাদিস: ২৫১৫৯)

এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে- রাসুলুল্লাহ (স.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো ১০ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হতো।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) ‘ফাতহুল বারি’তে ৩/২৬-এ লেখেন, আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ বর্ণনা। এ বিষয়ে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সেসবের মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব। (ফাতহুল বারি: ৩/২৬)

আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রমজানে এবং রমজানের বাইরে রাসুল (সা.) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম: ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)


বিজ্ঞাপন


বিতর নামাজের নিয়ম
বিতর নামাজ প্রায় অন্য ফরজ নামাজের মতো। তবে নিয়মের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা আছে। দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়তে হয়। কিন্তু সালাম ফেরানো যাবে না। সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, রাসুল (স.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)

এরপর তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতেহা, এরপর অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাতে হয়। কেরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠাতে হয় এবং তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বেঁধে নিঃশব্দে (অনুচ্চঃস্বরে) দোয়া কুনুত পড়তে হয়। দোয়া কুনুত পড়ে আগের মতো রুকু-সেজদা করতে হয়। তারপর শেষ তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।
বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, ‘..রাসুলুল্লাহ (স.) তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। বরং তৃতীয় রাকাতে সবশেষে সালাম ফেরাতেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-ও এভাবে বিতর পড়তেন। তার সূত্রে মদিনাবাসীরাও বিতর নামাজ এভাবে গ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন: ১/৩০৪, হাদিস: ১১৮১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাহ অনুযায়ী বিতর পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর