রক্ত দান করা জায়েজ। রক্তদানের পর রক্তদাতার কোনো সমস্যা হয় না, অন্যদিকে অসুস্থ ব্যক্তির উপকার হয়, তাই আলেমরা রক্তদানের ব্যাপারে মত দিয়েছেন। রক্ত দেওয়া সহযোগিতামূলক কাজ কিংবা কারো জীবনে সাহায্য হয় তাই ইসলামে রক্তদান অন্যতম নেক আমল।
যদি কেউ কোনো নারীকে রক্ত দান করে তাহলে সেই নারী বোন হয়ে যায় না এবং তাকে বিয়ে করতেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা রক্ত দেওয়ার কারণে হারাম সাব্যস্ত হয় না। একইভাবে স্বামীর রক্ত স্ত্রীর শরীরে, স্ত্রীর রক্ত স্বামীর শরীরে প্রবেশ করানোও জায়েজ। এতে বৈবাহিক সম্পর্ক যথারীতি বহাল থাকে। ইসলামি শরিয়তমতে, রক্ত নেওয়া ও দেওয়ার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মাহরামের সম্পর্ক তৈরি হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ: ২, পৃষ্ঠা-৪০)
বিজ্ঞাপন
যাদের বিয়ে করা হারাম তাদের পরিচয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শাশুড়ি, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, কিন্তু যদি তাদের সাথে তোমরা সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের বদলে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে) তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা নিসা: ২৩)
সুতরাং রক্ত দেওয়া-নেওয়ার কারণে কোনোরকম সমস্যা নেই। বরং এটি সদকার মতোই একটি উত্তম ইবাদত। রক্ত দেওয়ার কারণে গাইরে মাহরাম যেমন মাহরাম হয় না, তেমনি মাহরামের সম্পর্কও ঠিক থাকে।
উল্লেখ্য, রক্ত বিক্রি করা জায়েজ নয়। কিন্তু বিনামূল্যে যদি যথাসময়ে উপযুক্ত রক্ত পাওয়া না যায়, তখন তার জন্য মূল্য দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে যে রক্ত দেবে তার জন্য ওই মূল্য গ্রহণ নাজায়েজ। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৩৮)
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েজ। কিন্তু শরিয়তসিদ্ধ কথা হলো, কাফের-ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা নাপাক ও হারাম খাদ্য গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে খাবারের প্রভাব রক্ত-মাংসে পড়ে। তাই তাদের মন্দ স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার বেশ আশংকা থেকে যায়। (এজন্য শিশুর জন্য পাপাচারী মহিলার দুধ পান করা মাকরুহ করা হয়েছে। ) সুতরাং এসব ক্ষতির দিকে লক্ষ্য করে, অমুসলিমের রক্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৪০)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে শরিয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলামে রক্ত দান, ইসলামে রক্ত দানের বিধান, রক্ত দিলে কি মাহরাম হয়? রক্ত দিলে বিয়ে করা যায়?

