দেশে যত বন্যপ্রাণী পিটিয়ে হত্যা করা হয় তার মধ্যে মেছো বিড়াল সম্ভবত সবচেয়ে অন্যতম। প্রায়ই নিরীহ এই প্রাণীটি পিটিয়ে হত্যা অথবা বন্দি করার খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়।
দেশের বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের জলাশয়ের আশপাশে মেছো বিড়ালের দেখা মেলে। কিন্তু, এই প্রাণীর অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন। পুকুরের মাছ ও বাড়ির হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যাওয়ায় মানুষ ফাঁদ পেতে প্রাণীটিকে হত্যা করেন। এ কারণে মেছো বিড়ালের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এই প্রাণী কোথায় থাকে, তা অজানা। তাই প্রাণীটির গতিবিধি, আচরণ ও জীবনধারা সম্পর্কে জানার উদ্যোগ নিয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
এসব জানতে দেশে প্রথম একটি মেছো বিড়ালের গলায় স্যাটেলাইট ভিত্তিক ‘জিপিএস’ কলার বসানো হয়েছে। একইসঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ও প্রাণীটির গুরুত্ব নিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মেছো বিড়ালটির নাম রাখা হয় ‘স্বাধীন’। এই ডিভাইসের মাধ্যমে সে কখন কোথায় থাকে, এই তথ্যগুলো জানা যাবে।
![]()
রোববার (২৬ মার্চ) রাতে মেছো বিড়ালটিকে তারা আবাসস্থলে অবমুক্ত করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার পরপরই ‘স্বাধীন’ প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চলে যায়। এই স্যাটেলাইট কলার পরানোর সার্বিক কাজে যুক্ত ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ, জাপানের রিতসুমেকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আই সুজুকি প্রমুখ।
বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, গবেষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই মেছো বিড়াল ধরা পড়ে। কিন্তু মেছো বিড়ালের জীবনযাপন ও স্বভাব সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। এরা মানুষের পুকুরের মাছ, বাড়ির হাঁস-মুরগি ধরে খায় কি না, খেলে ক্ষতির পরিমাণ। সপ্তাহে কতবার মানুষের ঘরবাড়িতে যায় ও কোন সময়ে যায়। বর্ষায় হাওর যখন পানিতে ডুবে যায়, ওই সময় কোথায় যায়, তা সহজে জানা যায় না। এসব তথ্য জানতে ২৫ মার্চ একটি পুরুষ মেছো বিড়ালের গলায় স্যাটেলাইট কলার বসানোর পর ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
![]()
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার জানান, গত কয়েক দিনে মেছো বিড়ালটিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তার বিচরণের এলাকাটা হচ্ছে ধানখেত, জলাভূমি। আগামী দুই মাসের মধ্যে এটি কোথাও বাসা করে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মানুষের সঙ্গে মেছো বিড়ালের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। প্রাণীটির সঙ্গে মানুষের কেন দ্বন্দ্ব লাগে, হাওর ডুবে গেলে কোথায় গিয়ে থাকে, এই বিষয়গুলো জানার জন্য মেছো বিড়ালের গলায় স্যাটেলাইট কলার বসানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ জানান, বাংলাদেশ মেছো বিড়ালের হটস্পট। শ্রীলঙ্কাতে অল্প কিছু আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আছে। তবে বাংলাদেশেই বেশি। এর মধ্যে বৃহত্তর সিলেটেই বেশি মারা পড়ে। ডিভাইসটি মেছো বিড়ালের গলায় পরানোর মাধ্যমে বুঝতে পারব, বর্ষায় কোন এলাকায় যায়, কোথায় থাকে, পাহাড়ে যায় কি না। তাদের পছন্দের জায়গা কোনটি। এগুলো জানতে পারলে কার্যক্রম নিতে পারব। সেই এলাকার মানুষকে সচেতন করার প্রোগ্রাম নেওয়া যাবে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট কলার পরানোর মাধ্যমে মানুষকেও একটা মেসেজ দেওয়া, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী।
টিবি

